মহাসাগরের গভীরে যে রহস্যময় মেঘের আড়ালের বহু রহস্য ভেদ হয়নি আজও:
স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের রানি ছিলেন মারিয়ানা। তার নামেই নামকরণ হয়েছিল প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের। ষোড়শ শতকে সেগুলো ছিল স্পেনীয় উপনিবেশ। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে এই দ্বীপগুলো আসলে ডুবে থাকা কিছু ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির চূড়া।
এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ২০০ কিমি পূর্বে বিস্তৃত বিশ্বের গভীরতম মহাসাগরীয় খাত। ২৫৫০ কিমি লম্বা এবং ৬৯ কিমি চওড়া এই সামুদ্রিক খাতের নাম দেওয়া হয়েছে নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জের নামেই। ফলে গভীরতম খাত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ’ -এর পরিচয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে স্পেনের রানির নাম।
সমুদ্রবিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে এই খাতের গভীরতম অংশের মাপ ১০, ৯৮৪ মিটার।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতম এই অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছে চ্যালেঞ্জার ডিপ।
এর গভীরতা বোঝানোর জন্য বলা হয়, যদি মাউন্ট এভারেস্টকে এর মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আরও প্রায় দু’কিমি বা ১.৬ মিটারের মতো জায়গা বাড়তি পড়ে থাকবে। অর্থাৎ পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের থেকেও আয়তনে বড় বিশ্বের গভীরতম খাত।
মারিয়ানা খাতের শেষ সীমায় তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ১ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। এই অংশে জলস্তম্ভের চাপও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে এই চাপের পরিমাণ প্রায় ৮ টন। সমুদ্রতলে স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় এই পরিমাপ প্রায় হাজার গুণ বেশি। মারিয়ানা খাতে গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এই জলস্তম্ভের চাপ।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে যখন দু’টি টেকটনিক পাতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন একটি পাত দ্বিতীয়টির নীচে ঢুকে গেলে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো গভীর সামুদ্রিক খাতের সৃষ্টি হয়।
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা মাপে ব্রিটিশ জাহাজ এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার। পরে বহু বার বিশ্বের গভীরতম খাত নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে এর গভীরতা সংক্রান্ত তথ্য।
আজ অবধি মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষবিন্দুতে অসংখ্য অভিযাত্রীর পা পড়েছে। কিন্তু মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পৌঁছতে পেরেছেন মাত্র নগণ্য সংখ্যক অভিযাত্রী।
এই দুই অভিযাত্রী ছিলেন জাক পিকার্ড এবং মার্কিন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ। ১৯৬০ সালে মার্কিন নৌসেনার ব্যাথিস্কেপে সওয়ার হয়ে এই দুই দুঃসাহসী পৌঁছেছিলেন মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে।
ব্যাথিস্কেপ হল সমুদ্রের গভীরে অভিযান চালানোর জলযান। ডুবোজাহাজের সঙ্গে এর অনেকটাই বৈসাদৃশ্য আছে। সুইস ও ইতালীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ব্যাথিস্কেপ ‘ত্রিয়েস্ত’ -এর সাহায্যে বিশ্বের গভীরতম বিন্দুতে অভিযান চালিয়েছিলেন এই অভিযাত্রী জুটি।
পাঁচ ঘণ্টা ধরে অবতরণের পর গন্তব্যে পৌছতে পেরেছিলেন পিকার্ড এবং ওয়ালশ। কিন্তু চ্যালেঞ্জার ডিপ-এর গভীর বিন্দুতে থাকতে পেরেছিলেন মাত্র ২০ মিনিট। তারা ১০, ৯১৬ মিটার পর্যন্ত নামতে পেরেছিলেন।
তাদের যাত্রাপথে বা গভীরতম বিন্দুতে পৌঁছে কোনও ছবি তুলতেই পারেননি অভিযাত্রীরা। কারণ তাদের যাত্রাপথ ঘিরে ছিল ক্লাউড অব সিল্ট। কিন্তু মহাসাগরের গভীরে মেঘ এল কোথা থেকে?
আসলে এই মেঘ আকাশের জলীয় বাষ্পপূর্ণ কণার সমষ্টি নয়। এ হল বালি, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণের সমষ্টি, যা পানির প্রবাহে ক্রমাগত জমতে থাকে মহাসগরের গভীর খাতে। সেই জমাটবদ্ধ বালি-কাদামাটির অংশকেই মেঘ বলে বর্ণনা করা হয়।
বিজ্ঞানীদের মূল প্রশ্ন ছিল, মারিয়ানা খাতের গভীরে কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে? দুই অভিযাত্রীকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। কিন্তু একে সেখানে নিকষ অন্ধকার। তার ওপর কাদামাটির জমাট মেঘ। ফলে অন্ধকার ভেদ করে ‘ত্রিয়েস্ত’ -এর আলো রহস্যভেদ করতে পারেনি।
পিকার্ড বারবার দাবি করেন, তিনি গভীর খাতে একটি ফ্ল্যাটফিশ দেখেছিলেন। কিন্তু তার দাবির সঙ্গে সহমত হতে পারেননি অধিকাংশ বিজ্ঞানী।
তাদের মতে, জলস্তম্ভের অত চাপে কোনও প্রাণী জীবিত থাকতে পারে না। কারণ চাপের ফলে ক্যালসিয়াম দ্রবীভূত হয়ে যাবে। ক্যালসিয়াম গলে গেলে প্রাণীর হাড়ের গঠনও অসম্ভব।
কিন্তু প্রকৃতি বারবার ভুল প্রমাণ করেছে বিজ্ঞানীদের ধারণাকে। গবেষক ও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের ধারণা, চ্যালেঞ্জার ডিপ-সহ মারিয়ানা খাতের বহু অংশের নিকষ অন্ধকারে বহু রহস্য অপেক্ষা করে আছে বাইরের পৃথিবীর জন্য। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের বেশিরভাগ অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অনুমতি সাপেক্ষেই গবেষণা করা যায় বিশ্বের এই ভৌগোলিক বিস্ময়ে।
প্রথম অভিযানের পর অর্ধশতক বছর পেরিয়ে ২০১২ সালে ফের মানুষের অবতরণ মারিয়ানা খাতে। এবার সাব-ডাইভ দেন চিত্র পরিচালক জেমস ক্য়ামেরন। তিনি পৌঁছাতে পেরেছিলেন ১০, ৯০৮ মিটার পর্যন্ত। একটুর জন্য বেঁচে যায় প্রথম দুই অভিযাত্রীর রেকর্ড। তবে সম্প্রতি আরেক অভিযাত্রী ভিক্টর ভেসকোভো পৌঁছেছেন ১০, ৯২৭ মিটার পর্যন্ত। তিনি প্রথম অভিযাত্রীদের রেকর্ড ভাঙতে পেরেছেন।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তুলনামূলক অগভীর অংশে অ্যাম্ফিপড এবং হলোথুরিয়ান্সের মতো সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, প্রাণীবিজ্ঞানের আরও অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে মারিয়ানা খাতের নিকষ অন্ধকারে। চরম পরিবেশে কী করে প্রাণীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, সেই রহস্য জানা গেলে বায়োমেডিসিন ও বায়োটেকনলজির অনেক বন্ধ দরজা খুলে যাবে।
বিজ্ঞানী মহলের আরও ধারণা, মারিয়ানা খাতের অন্ধকার ভবিষ্যতে আলো ফেলতে পারে পৃথিবীতে প্রাণসৃষ্টির রহস্যের ওপরেও। তবে দূষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি এই গভীর বিন্দুও। এখানেও পাওয়া গেছে প্লাস্টিক!
সূত্র: আনন্দবাজার
Even today, many mysteries behind the mysterious clouds in the depths of the sea remain unsolved:
Mariana was the queen of King Philip IV of
Spain. The Pacific islands were named after him. In the sixteenth century they
were Spanish colonies. These islands in the western part of the North Pacific
Ocean are actually the peaks of some submerged sleeping volcanoes.
The deepest ocean range in the world extends up
to 200 kilometers east of the islands. At 2550 km long and 69 km wide, this sea
area is named after the nearby islands. As a result, the name of the Queen of
Spain has been associated with the identity of the deepest trench ‘Mariana
Trench’.
According to the study of oceanographers, the
size of the deepest part of this sector is 10,984 meters.
The deepest part of the Mariana Trench is named
Challenger Deep.
To explain its depth, it is said that if Mount
Everest could be placed on it, it could have an extra space of about 2 km or
1.6 m. That is, the deepest channel in the world, larger in size than the
highest peak in the world.
Temperatures hover around 1 to 4 degrees Celsius
in the Mariana region. The pressure of the water column in this part is also
much higher than normal.
The amount of this pressure per square inch is
about 6 tons. This measurement is about a thousand times higher than the normal
atmospheric pressure at sea level. The pressure of this water column increases
with the depth in the Mariana sector.
According to geologists, when two tectonic
plates collide inside the Earth, when one plate penetrates the bottom of the
other, a deep oceanic channel like the Mariana Trench is formed.
In 185, the British ship HMS Challenger measured
the depth of the Mariana Trench for the first time. Later, the deepest sector
in the world has been studied many times. Information about its depth has
changed at different times.
To this day, numerous climbers have set foot on
the summit of Mount Everest. But only a small number of explorers have been
able to reach the depths of the Mariana Trench.
The two explorers were Jacques Picard and U.S.
Navy Lieutenant Don Walsh. The two adventurers reached the depths of the
Mariana Trench in 1970 on a US Navy bathescope.
Bathyscape is a submarine. It has a lot in
common with submarines. The pair traveled to the deepest point in the world
with the help of Swiss and Italian technology bathescape 'Trieste'.
After landing for five hours, Picard and Walsh were able to reach their destination. But the challenger was able to stay in the deep point of the deep for only 20 minutes. They were able to descend to 10, 918 meters.
The explorers could not take any pictures of
their journey or reaching the deepest point. Because their journey was
surrounded by the Cloud of Silt. But where did the deep ocean clouds come from?
In fact, these clouds are not the sum of water
vapor particles in the sky. This is a combination of sand, clay and other
materials, which are constantly accumulated in the flow of water in the deepest
part of the ocean. That part of the frozen sand-clay is described as a cloud.
The main question of the scientists was, does
life exist in the depths of the Mariana sector? The two explorers have been
repeatedly asked. But it is pitch dark there. A frozen cloud of clay over him.
As a result, the light of 'Triest' could not penetrate the darkness.
Picard repeatedly claimed he saw a flatfish in
the deep sector. But most scientists could not agree with his claim.
According to them, no animal can survive under
the pressure of the water column. Because calcium will dissolve as a result of
stress. When calcium is dissolved, bone formation is also impossible.
But nature has repeatedly proved scientists
wrong. Researchers and oceanographers believe that many parts of the Mariana
Islands, including the Challenger Deep, are shrouded in mystery. The United
States is now responsible for the maintenance of most of the Mariana Trench.
With their permission, research can be done in this geographical wonder of the
world.
Half a century after the first expedition, in 2012,
people landed again in the Mariana sector. This time the film director James
Cameron gave a sub-dive. He was able to reach 10,908 meters. The record of the
first two adventurers survives for a while. But recently another explorer
Victor Veskovo reached 10,926 meters. He was able to break the record of the
first explorer.
In the relatively shallow part of the Mariana
Trench, marine creatures such as amphibians and holothurians exist. But
scientists are sure that many more wonders of zoology are waiting in the pitch
darkness of the Mariana sector. Knowing the secrets of how animals survive in
extreme environments will open many closed doors to biomedicine and
biotechnology.
Scientists further speculate that the dark
future of the Mariana Canal could shed light on the mysteries of life on Earth.
However, this deep point was not spared from pollution. Plastic found here!
Source: Anandabazar
No comments:
Post a Comment